বিবাহ ও মুসলিম পারিবারিক আইন ২০২৪

বিবাহ মানব ইতিহাস লক্ষ করলে দেখা যায়, প্রাচীন সমাজে নারীদের মান-মর্যাদার প্রতি কোনো গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। সমাজে তখন নারীর অধিকার ও মর্যাদা ছিল না। ইসলাম ধর্মের বিধান অনুযায়ী বিবাহের মাধ্যমে নারীর মর্যাদা ও গুরুত্ব সংরক্ষিত হয়। ইসলাম নারীর অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করে নারী জাতিকে মানবিক উন্নতি ও প্রগতির বুনিয়াদ ঘোষণা করেছে। ইসলাম ঘোষণা করে_সমাজে পুরুষের মতোই নারীর অধিকার রয়েছে। তাই বিবাহ বন্ধনের মাধ্যমেই নারী-পুরুষের অধিকার নিশ্চিত হয়।

মুসলিম পারিবারিক আইন : মুসলিম পারিবারিক আইন ইসলামী শরিয়তের দ্বারা বিধিবদ্ধ হয়েছে। তবে যুগের বিবর্তনে এবং ক্রমোন্নতির সঙ্গে সঙ্গে সরকারিভাবে আইন ও বিধির দ্বারা কিছু কিছু নীতি নির্ধারিত হয়ে থাকে, এসব আইন, বিধি ও নীতিমালার প্রণয়ন যুগের প্রত্যক্ষ চাহিদা। আর এ লক্ষ্যে ১৯৬১ সালে প্রণীত হয়েছে মুসলিম বিবাহ আইন। যাতে প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক নারী-পুরুষের বিবাহ রেজিস্ট্র্রেশন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

বিবাহ রেজিস্ট্র্রেশন আইনে বৈধ বিবাহের অবশ্য পূরণীয় শর্তগুলো:

বিবাহের যোগ্যতা :

বিবাহ একটি উল্লেখযোগ্য অঙ্গীকার, এবং কিছু যোগ্যতা বা মানদণ্ড রয়েছে যা ব্যক্তিরা প্রায়শই গাঁট বাঁধার আগে বিবেচনা করে। এই যোগ্যতা সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় বা ব্যক্তিগত পছন্দের উপর ভিত্তি করে পরিবর্তিত হতে পারে। এখানে কিছু সাধারণ কারণ রয়েছে:

বয়স:

বাংলাদেশে, বৈধ বিবাহযোগ্য বয়স মহিলাদের জন্য 18 এবং পুরুষদের জন্য 21।

আর্থিক স্থিতিশীলতা:

দম্পতির নিরাপদ ভবিষ্যত নিশ্চিত করার জন্য আর্থিকভাবে স্বাধীন বা স্থিতিশীল হওয়াকে প্রায়ই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হয়।

শিক্ষাগত পটভূমি:

অনেক পরিবার অনুরূপ বা উচ্চতর শিক্ষাগত যোগ্যতা সহ অংশীদারদের পছন্দ করে।

স্বাস্থ্য এবং সুস্থতা:

শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্য হল মূল কারণ, কিছু পরিবার বিয়ের আগে মেডিকেল চেক-আপের উপর জোর দেয়।

সাংস্কৃতিক এবং ধর্মীয় সামঞ্জস্যতা:

ভাগ করা সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ এবং ধর্মীয় বিশ্বাস বিবাহিত জীবনে সম্প্রীতি নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

চরিত্র এবং খ্যাতি:

উত্তম নৈতিক চরিত্র এবং সম্মানজনক খ্যাতি অনেক পরিবারের জন্য অপরিহার্য।

পারস্পরিক সম্মতি:

উভয় ব্যক্তিকে অবশ্যই কোন প্রকার জবরদস্তি ছাড়াই স্বেচ্ছায় বিয়েতে সম্মত হতে হবে।

পারিবারিক পটভূমি:

পরিবারগুলি প্রায়ই সম্ভাব্য অংশীদারের পরিবারের সামাজিক এবং আর্থিক অবস্থান বিবেচনা করে।

এই যোগ্যতাগুলোকে মাথায় রেখে, ব্যক্তি ও পরিবার একটি সুচিন্তিত ও সুরেলা মিলন নিশ্চিত করতে পারে।

প্রস্তাব দান এবং কবুল : বিবাহ করতে ইচ্ছুক পক্ষদ্বয়ের মধ্যে এক পক্ষকে প্রস্তাব দিতে হবে এবং অপর পক্ষ থেকে তা গ্রহণ করতে হবে। প্রস্তাব দান ও গ্রহণ একই মজলিসে কমপক্ষে দুজন প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্ন পুরুষ সাক্ষী কিংবা একজন পুরুষ ও দুজন মহিলা সাক্ষীর সামনে হতে হবে। এটিই বিবাহ বন্ধন সংগঠিত হওয়ার মূল শর্ত।

সম্মতি : বিবাহের জন্য পাত্র এবং পাত্রীর স্বতঃস্ফূর্ত সম্মতির প্রয়োজন। বল প্রয়োগে সম্মতি আদায়ে বিবাহ বাতিল বলে গণ্য হবে।

বিবাহ রেজিস্ট্র্রেশন : বিবাহ রেজিস্ট্র্রেশন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইনের বিধান অনুসারে সরকার কর্তৃক নিযুক্ত নিকাহ্ রেজিস্ট্র্রার দ্বারা অবশ্যই বিবাহ রেজিস্ট্র্রি করাতে হবে।

বিবাহ রেজিস্ট্র্রেশন ফি : সরকার গেজেট নোটিফিকেশন দিয়ে বিবাহের ফি নির্ধারণ করেছে। বিবাহ রেজিস্ট্র্রেশন ফি দেনমোহরের ওপর নির্ধারণ হয়ে থাকে। দেনমোহরের প্রতি হাজারে ১০ টাকা হারে ফি নিকাহ্ রেজিস্ট্র্রাররা সরকার নির্ধারিত রশিদ প্রদানের মাধ্যমে গ্রহণ করে থাকেন। দেনমোহর বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ফি চার হাজার টাকা পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে।

বিবাহ রেজিস্ট্র্রি না করার ফলাফল : যেহেতু ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইনের বিধান অনুযায়ী প্রতিটি মুসলিম বিবাহ রেজিস্ট্র্রি করা বাধ্যতামূলক। বিবাহ রেজিস্ট্র্রি না করলে নিম্নলিখিত সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় :

১. সরকার নিযুক্ত নিকাহ্ রেজিস্ট্র্রার কর্তৃক বিবাহ রেজিস্ট্রেশন না হলে সম্পত্তির উত্তরাধিকারের বিবাদ-বিসংবাদের সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
২. বিয়ে রেজিস্ট্রি না হাওয়ায় বিবাহের বৈধতার ক্ষেত্রে দলিলগত সাক্ষীর অভাব ঘটে, ফলে বিবাদ নিষ্পত্তি করা অসম্ভব হয়ে পড়ে।
৩. নিকা রেজিস্ট্রেশন না হওয়ার ফলে মৃতের সন্তানদের উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে বৈধতার প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়।
৪. বিয়ে রেজিস্ট্র্রেশন না হলে স্ত্রী কর্তৃক স্বামীর বিরুদ্ধে খোরপোষ ও মোহরানার দাবির মামলা অগ্রাহ্য বলে গণ্য হতে পারে।

বিবাহ
বিবাহ

নিকার দেনমোহর : দাম্পত্যজীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো দেনমোহর। দেনমোহর বিবাহের একটি অত্যাবশ্যকীয় শর্ত। বিবাহের রেজিস্ট্র্রেশনের সময় দেনমোহর ধার্য করতে হবে। স্ত্রী স্বামীর কাছ থেকে ন্যায়সঙ্গতভাবে দেনমোহর পাওয়ার অধিকারী হবে।

বিয়ের সময় প্রতিদানস্বরূপ বর কর্তৃক প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে দিতে সম্মত অথবা গৃহীত কোনো সম্পত্তি বা মূল্যবান জামানতকে মোহর বলে। মোহরপ্রাপ্তির অধিকার সম্পূর্ণরূপে স্ত্রীর। মোহরানা বলতে এমন অর্থ সম্পদ বুঝায়, যা বিয়ের বন্ধনে স্ত্রীর ওপর স্বামীত্বের অধিকার লাভের বিনিময়ে স্বামীকে আদায় করতে হয়।

মোহরানা স্বামীর কোনো করুণা নয়, না কোনো সামাজিক ট্রাডিশন। স্ত্রীর মোহরানা দেওয়ার জন্য আল্লাহ তায়ালার যে নির্দেশ তা নামাজ রোজার মতোই একটি নির্দেশ। স্ত্রীর মোহরানার অর্থ আদায় করা স্বামীর ওপর যেমন অবশ্য কর্তব্য, তেমনি তা ইবাদতও।

ইসলামী শরিয়তের বিধান মোতাবেক মোহর আদায় প্রতিটি স্বামীর জন্য ফরজ। দেনমোহর স্বামীর জন্য একটি ঋণ, সর্বাবস্থায় দেনমোহর পরিশোধ করা বাধ্যতামূলক। রাসুল (সা.) বলেছেন – ’যে ব্যক্তি কোনো মেয়েকে মোহরানা দেওয়ার ওয়াদায় বিয়ে করেছে, কিন্তু সে মোহরানা আদায় করতে তার ইচ্ছে নেই, কেয়ামতের দিন সে আল্লাহর সামনে অপরাধী হিসেবে দাঁড়াতে বাধ্য হবে’ (মুসনাদে আহমদ)।

বাংলাদেশে মুসলিম পারিবারিক আইন বিবাহ, বিবাহবিচ্ছেদ এবং অন্যান্য পারিবারিক-সম্পর্কিত বিষয় নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। 2024 সালে প্রযোজ্য মুসলিম পারিবারিক আইনের মূল হাইলাইটগুলি এখানে রয়েছে:

বিবাহ নিবন্ধন:

মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ 1961 এর অধীনে বাংলাদেশে বিবাহ নিবন্ধন বাধ্যতামূলক।

একটি বৈধ নিকাহ নামা (বিবাহ চুক্তি) অবশ্যই লাইসেন্সপ্রাপ্ত নিকাহ রেজিস্ট্রারের সাথে স্বাক্ষরিত এবং নিবন্ধিত হতে হবে।

বহুবিবাহ প্রবিধান:

একজন পুরুষ একাধিক স্ত্রীকে বিয়ে করতে চাইলে সালিশি পরিষদের কাছ থেকে লিখিত অনুমতি নিতে হবে।

সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করতে ব্যর্থ হলে আইনি পরিণতি হতে পারে।

মেহর (দাওর):

নিকাহ নামায় বর্ণিত স্বামী স্ত্রীকে মেহর দিতে বাধ্য।

বিয়ের আগে মেহরের পরিমাণ অবশ্যই পারস্পরিক সম্মতিতে হতে হবে।

নারীর অধিকারঃ

নারীদের নিকাহ নামায় শর্ত স্থির করার অধিকার রয়েছে, যেমন তালাকের অধিকার বা বহুবিবাহের উপর বিধিনিষেধ।

ইসলামী আইনে তাদের বিবাহবিচ্ছেদ (খুলা) শুরু করার অধিকারও রয়েছে।

বিবাহবিচ্ছেদের পদ্ধতি:

তালাক অবশ্যই ইসলামী নীতি ও বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী সম্পন্ন করতে হবে।

একটি লিখিত নোটিশ স্থানীয় সরকার অফিসে জমা দিতে হবে, একটি পুনর্মিলন প্রক্রিয়া অনুসরণ করে।

শিশুদের হেফাজত:

বিচ্ছেদের ক্ষেত্রে, অপ্রাপ্তবয়স্ক শিশুদের হেফাজত সাধারণত মাকে দেওয়া হয়, যখন পিতা পরিদর্শনের অধিকার এবং আর্থিক দায়িত্ব বজায় রাখেন।

উত্তরাধিকার আইন:

উত্তরাধিকার ইসলামী নীতি দ্বারা পরিচালিত হয়, উত্তরাধিকারীদের মধ্যে ন্যায়সঙ্গত বন্টন নিশ্চিত করে।

নারীরা সম্পত্তির উত্তরাধিকারী, যদিও তাদের অংশ পুরুষ উত্তরাধিকারীদের থেকে আলাদা হতে পারে।

মুসলিম পারিবারিক আইন মেনে চলার মাধ্যমে, ব্যক্তি এবং পরিবার তাদের বৈবাহিক এবং পারিবারিক সম্পর্ক নৈতিক ও আইনগতভাবে পরিচালিত হয় তা নিশ্চিত করতে পারে।

উপসংহার

সঠিক জীবন সঙ্গী খুঁজে পাওয়া জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ, এবং বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় বিবাহের মিডিয়া পরিষেবা- Kabinbd এই যাত্রাকে আরও সহজ করে তুলছে। প্রতিটি পরিষেবা অনন্য বৈশিষ্ট্য অফার করে এবং প্রত্যেকের জন্য কিছু না কিছু আছে তা নিশ্চিত করে বিভিন্ন চাহিদা পূরণ করে। আপনি একটি আধুনিক অনলাইন প্ল্যাটফর্ম, একটি বিশ্বাস-ভিত্তিক পদ্ধতি বা ঐতিহ্যগত এবং সমসাময়িক পদ্ধতির মিশ্রণ পছন্দ করুন না কেন, এই পরিষেবাগুলি কার্যকর সমাধান প্রদান করে৷ এই পরিষেবাগুলির পাশাপাশি, বাংলাদেশের মুসলিম পারিবারিক আইনগুলি বোঝার ফলে বিবাহগুলি আইনি এবং নৈতিক সীমার মধ্যে পরিচালিত হয়। প্ল্যাটফর্ম এবং পদ্ধতি বেছে নিন যা আপনার পছন্দের সাথে সবচেয়ে বেশি অনুরণিত হয় এবং একটি পরিপূর্ণ বিবাহিত জীবনের দিকে আত্মবিশ্বাসী পদক্ষেপ নিন।

Google search engine

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here